3.05.2012

বিপিএল কর্তৃপক্ষকে আদালতে নিল চট্টগ্রাম

সেমিফাইনালিস্ট নির্ধারণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় পড়া বিপিএল কর্তৃপক্ষকে এবার আদালতে দাঁড়াতে হচ্ছে।

‘নাটকীয় সিদ্ধান্তে’ সেমিফাইনাল বাদ পড়া চট্টগ্রাম কিংস বুধবার ফাইনাল শুরুর পাঁচ ঘণ্টা আগে বিপিএল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ঢাকার জজ আদালতে একটি মামলা করেছে।

এতে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠেয় ফাইনালের ওপর কোনো স্থগিতাদেশ না দিলেও বিপিএল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদকসহ সাত জনকে তলব করা হয়েছে।

জজ আদালতে পুরোপুরি সফল না হওয়ার পর হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছে চট্টগ্রাম কিংসের মালিক পক্ষ।

এতে চট্টগ্রাম কিংসকে সেমিফাইনাল থেকে বাদ দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি বুধবার ফাইনালের ওপরও নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকারের বেঞ্চে বেলা ৩টায় এর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

রিট আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম কিংস দলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামীর কাদের চৌধুরী। আইনজীবী ছিলেন রোকনউদ্দিন মাহমুদ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষে শুনানিতে থাকবেন ব্যারিস্টার রফিক উল হক।

এর আগে দুপুর দেড়টায় ঢাকার জজ আদালতে একটি মামলা করেন চট্টগ্রাম কিংস মালিক সামীর কাদের।

এতে অভিযোগ করা হয়, বেআইনিভাবে সেমিফাইনালে তাদের বাদ দিয়ে বরিশাল বার্নার্সকে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

মামলায় মঙ্গলবার বিপিএল সেমিফাইনালে বরিশালের খেলাটি বাতিল এবং বুধবারের ফাইনাল খেলাটি স্থগিত রাখতে আদালতের নির্দেশ চাওয়া হয়েছিল বলে মামলাকারীর আইনজীবী লিটন রায় চৌধুরী জানিয়েছেন।

বরিশাল বার্নার্স ইতোমধ্যে সেমিফাইনালে দুরন্ত রাজশাহীকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় তারা ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের।

মামলায় বিপিএল পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপুসহ সাত জনকে বিবাদি করা হয়েছে। তবে এক ও দুই নম্বর বিবাদি করা হয়েছে পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুদ্দীন মো. আলমগীর ও ম্যাচ রেফারি মাইক প্রক্টরকে। বরিশাল বার্নার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও বিবাদির তালিকায় রয়েছেন।

তবে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয়টি বিবেচনা করে সেমিফাইনাল বাতিল কিংবা ফাইনাল স্থগিতের কোনো আদেশ জজ শওকত হোসেন দেননি।

এর ফলে বুধবার সন্ধ্যার ফাইনাল খেলা চলবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

তবে বিচারক শওকত এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সাত বিবাদিকে আগামী ১৫ মার্চ আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।

দুই দলের পয়েন্ট সমান হওয়ার পর সোমবার মধ্যরাতে এক বৈঠকের পর বিপিএল পরিচালনা পর্যদ জানায়, বরিশাল বার্নার্সই সেমিফাইনাল খেলবে, চট্টগ্রাম কিংস বাদ।

সেদিন সন্ধ্যায়ই বিপিএল পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ জানিয়েছিলেন, বরিশাল নয়, চট্টগ্রাম কিংস উঠেছে সেমিফাইনালে।

তবে আগের দিন রোববার খেলা শেষের পর টেলিভিশনে ধারাভাষ্যকাররা বলেছিলেন, বরিশাল বার্নার্সই সেমিফাইনালে উঠেছে।

বরিশাল বার্নার্স ও চট্টগ্রাম কিংসের এই জটিলতা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে পড়েছে বিপিএল কর্তৃপক্ষ তথা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

শেষ চারের লড়াইয়ে বাদপড়ার খবর জানার পর চট্টগ্রাম কিংসের মালিক পক্ষ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, তারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাবে।

চট্টগ্রাম কিংস দলটির পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এস কিউ গ্রুপ। এর অন্যতম কর্ণধার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম কিংসের মালিক পক্ষের সামীর কাদের বলেন, “বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল আমাদের কোনো তথ্য (বাদ পড়ার) পর্যন্ত জানায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে বিসিবি কার্যালয়ে গেলে রাত ২টা ১৯ মিনিটে (মঙ্গলবার ভোররাত) আমাদের একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়ে জানানো হয়, সেমিফাইনালে খেলছি না আমরা।”

নিয়ম ভেঙে চট্টগ্রাম কিংসকে বাদ দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “বাইলজ ভেঙে আমাদের সেমিফাইনাল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ২১ এর ৮ এর দুই উপধারা ও এক উপধারা মিলিয়ে নিয়ম বানানো হয়েছে। কিন্তু এভাবে একেক উপধারা থেকে একেক অংশ নিয়ে নিয়ম বানানো যায় না।”

চট্টগ্রামের সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল বাদে অন্য তিন সেমিফাইনালিস্ট দলের কর্মকর্তা ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ব্যবস্থাপক কাজী শফিকুল হক হীরা, দুরন্ত রাজশাহীর ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ, খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের ব্যবস্থাপক জাহিদ রাজ্জাক মাসুমও ছিলেন।

তারা বলেন, নিয়ম ভঙ্গ করে যদি চট্টগ্রাম কিংসকে বাদ দেওয়া হয়, তবে চট্টগ্রামের প্রতি তাদের সমর্থন থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিপিএলে বাজিকরদের সংশ্লিষ্টতা দিকেও ইঙ্গিত করেন চট্টগ্রাম কিংসের পৃষ্ঠপোষক। সামীর কাদের বলেন, “বিপিএল জুয়ার আসর হয়ে আছে। আমার সন্দেহ হচ্ছে সেই জুয়ার কারণেই বরিশাল বার্নার্সকে সেমিফাইনালে খেলানো হচ্ছে কি না।’

খবরঃ  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম