2.11.2012

ও লা লা মাতালো বিপিএল

আলোর ঝলকানি, চোখ ধাঁধানো নাচ আর গানে উদ্বোধন হলো বিপিএল-এর। ও লা লা, ও লা লা গানে দর্শকদের মাতালেন প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী বাপ্পী লাহিড়ি। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ বিপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গানের সঙ্গে নাচেন ভারতীয় শিল্পী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, বিপাশা বসু ও মালাইকা অরোরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে তারকার মেলা বসেছিল। ভারত-বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকাই মঞ্চে উঠেছিলেন দর্শক মাতাতে। তবে মন মাতানো কোরীয়গ্রাফি আর অপরূপ নাচে দর্শকদের মন জয় করেন খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা ও শিবলী মোহাম্মদ। উপভোগ্য নাচের সঙ্গে জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল বাংলা মায়ের রূপ-বৈচিত্র্য। মাঝখানে বাংলাদেশের হট পপ শিল্পী মিলা কয়েকটি গান শোনান। এরপর মঞ্চে আসেন ব্যান্ডদল মাইলস। দলটির প্রধান ভোকাল সাফিন আহমেদ গেয়ে শোনান দর্শকপ্রিয় কয়েকটি গান। টালিউডের হাটথ্রুব নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত মঞ্চে ওঠেন অনেকটা খোলামেলা পোশাকেই। তবে সেটি দৃষ্টিকটু মনে হয়নি দর্শকদের। প্রথম অ্যালবামের হিট গান ঘুমন্ত শহরে গাইতে গাইতে মঞ্চে ওঠেন খ্যাতিমান ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। বাচ্চু নামতেই চোখ ধাঁধানো পোশাকে মোটরসাইকেল নিয়ে মঞ্চে আসেন বর্তমান সময়ে ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান। তার সঙ্গে ছিলেন যথারীতি অপু বিশ্বাস। কারো প্রেমে পড়লাম নারে, মোবাইল ফোনে শুনলাম নারে আই লাভ ইউ এই গানের সঙ্গে লিপসিং করে নাচেন শাকিব ও অপু। তারা মঞ্চ থেকে নামতেই গ্যালারি থেকে শব্দ আসে ও লা লা, ও লা লা। বোঝা যায় মঞ্চে উঠেছেন বাপ্পী লাহিড়ি। তিনি মঞ্চে উঠেই বলেন, আমার জন্ম কোলকাতাতে হলেও আমি নিজেকে বঙ্গ সন্তান মনে করি। বলেন, ও লা লা নিশ্চয় হবে। তবে তার আগে মনমাতানো আরও কিছু গান করতে চাই। আমরা অমরসঙ্গী, ডিস্কো ড্যান্সার সহ আরও কয়েকটি গান গেয়ে শোনান তিনি। এরপর মঞ্চে ওঠেন ভারতীয় হট নায়িকা ও আইটেম গার্ল মালাইকা অরোরা। ছাম্মাক ছাল্লো, কোলাবারি ডি, চল ছাইয়া ছাইয়া, মুন্নি বদনাম হুয়ি গানের সঙ্গে নাচেন তিনি । এ সময় দর্শকরা নানা চিৎকার ও শিশ বাজিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। তরুণ-তরুণীদের চেয়ার ছেড়ে গানের তালে তালে নাচতে দেখা যায়।
ভারতীয় আইপিএল-এর মোড়কে গড়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) নিয়ে উত্তেজনাটা অনেকদিনেরই বলা যায়। ক্রিকেট অনুরাগীরাও আগে থেকেই বেশ রোমাঞ্চিত ছিলেন বিপিএল-এর এই প্রথম আসর নিয়ে। কিন্তু উদ্বোধনের দিন দেখা গেল উল্টো চিত্র। দর্শকশূন্য গ্যালারিতেই পর্দা উঠালো বিপিএল-এর প্রথম আসরের। টিকেটের অগ্নিমূল্যের কারণে দর্শকরা স্টেডিয়ামমুখী হননি। ম্যাচের টিকেট পাঁচ শ’ টাকা থাকলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ২০০০ টাকা। এ কারণেই আয়োজনে কমতি না থাকলেও দর্শকরা সেভাবে ভিড় জমায়নি মিরপুর শের- ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। এর সঙ্গে ছিল চরম অব্যবস্থাপনা। যা গতকাল কারও চোখ এড়ায়নি। সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠান শুরু করার কথা থাকলেও তা শুরু হয় ৪৫ মিনিট পর। সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় সাংবাদিকদের। জমকালো এই আয়োজনে শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে যাত্রা শুরু করে বিপিএল। তারপরই বিপিএল-এর থিং ‘যুদ্ধ শুরু ক্রিকেটের’ মঞ্চে আসেন বাপ্পী লাহিড়ি, সান ও কুমার বিশ্বজিৎ। এরা একসঙ্গে বিপ এরপর একে একে থিং সংয়ের তালে তালে মাঠে প্রবেশ করে ছয়টি দল। এরপরই ফাঁকা গ্যালারির সামনে বিপিএল-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন- প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান। এ সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, বিসিবি’র প্রেসিডেন্ট আহম মোস্তফা কামাল ও বিপিএল’র প্রেসিডেন্ট গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
টিকেটের উচ্চমূল্য এবং আয়োজকদের সমন্বয়হীনতার কারণে দর্শকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। হাতে গোনা হাজার দু’য়েক দর্শক যাও টিকেট কেটে মাঠে আসেন তারাও ভাল করে উপভোগ করতে পারেননি উদ্বোধন অনুষ্ঠান। মাঠে চারটি জায়ান্ট স্ক্রিন থাকলেও সবগুলোই ছিল অকার্যকর। নওশিন ও মুনমুনের উপস্থাপনায় প্রেসিডেন্টের উদ্বোধনের পরই শুরু হয় চোখ ধাঁধানো আতশবাজি। তারপরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উদ্বোধন ঘোষণার পরই মঞ্চের দখল নেন বলিউড অভিনেত্রী বিপাশা বসু ও মালাইকা অরোরা। এই দুই ভারতীয় শিল্পী ছিলেন বিপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে। এদের ভিড়ে হতাশ করেননি ঋতুপর্ণা, শাকিব খান, অপু বিশ্বাস। আর উপর বাংলার বাপ্পী লাহিড়ি, সানদের সঙ্গে কম যাননি এপার বাংলার আইয়ুব বাচ্চু, কুমার বিশ্বজিৎ, মাইলস, মিলারা। একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান শেষ হবে বিপাশার নাচের তালে তালে ফায়ার ওয়ার্কসের মধ্য দিয়ে রাত ১০টায়। এই উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সমপ্রচার করে চ্যানেল নাইন। গোটা মাঠে আলোক বর্ণালী ছড়িয়ে দিতে বসানো হয়েছিল শ’ শ’ আধুনিক লাইটের মাঝে দেশী শিল্পীদের সঙ্গে বিদেশীদের চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স কাউকে হতাশ করেননি সেটা বলা যায়।